শনিবার, ২৬ এপ্রিল ২০২৫, ১১:১১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের জীবনাবসান মাগুরায় শিশু আছিয়াকে ধর্ষণে অভিযুক্তের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার আগুন চোখের জলে চিরনিদ্রায় শায়িত মাগুরার সেই শিশুটি সরকার প্রধানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয় ড. ইউনূ‌সের চীন সফর নি‌য়ে রাষ্ট্রদূত Your First Online Casino: A Beginners Guide to PLUS777 Top-Rated Online Casino Platform Official Website পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি’র মৃত্যু আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রাজধানীতে নারী সংহতির মতবিনিময় সভা বিজ্ঞানে নারীর অবদান যাদের আবিষ্কারের কৃতিত্বটুকুও কেড়ে নিয়েছে পুরুষ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নীলফামারীতে বালিকাদের বাইসাইকেল র‌্যালি নাচোলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন

অনলাইনে কেনাকাটায় প্রতারণা এবং সতর্কতা:কমান্ডার খন্দকার আল মঈন

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : শনিবার, ৭ অক্টোবর, ২০২৩
  • ১২৬ বার

ক্রেতা ও বিক্রেতাদের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধির জন্য বাজার ব্যবস্থায় যোগ হয় সুপার শপ, শপিং মল, সুপার মার্কেট, মেগা মল। বাজারে গিয়ে সরাসরি পণ্য ক্রয়ের পাশাপাশি মানুষজন বর্তমানে অনলাইনে অর্ডার করে ঘরে বসেই পণ্য পেয়ে যাচ্ছে। সরাসরি পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে ক্রেতারা বিভিন্ন পণ্য যাচাই-বাছাই করে কাক্সিক্ষত পণ্য ক্রয় করতে পারে। কিন্তু অনলাইনে পণ্য ক্রয়ের ক্ষেত্রে বিক্রেতার অনলাইনে দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে পণ্য অর্ডার করতে হয়। সরাসরি পণ্য যাচাই-বাছাই করার সুযোগ না থাকায় কিছু সুযোগসন্ধানী ব্যক্তি কাক্সিক্ষত পণ্য সরবরাহ না করে অর্থ আত্মসাৎ বা নিম্নমানের পণ্য সরবরাহসহ বিভিন্ন ধরনের প্রতারণার আশ্রয় নিচ্ছে। তাই অনলাইন কেনাকাটায় ঝুঁকিও বৃদ্ধি পাচ্ছে।

অনলাইন কেনাকাটায় জনপ্রিয়তার কারণ অনলাইনে ঘরে বসে কয়েক ক্লিকে সহজেই পণ্য ক্রয় করা যায়, বাইরে যাওয়া লাগে না; পণ্য বহন বা দরদামও করতে হয় না। অনলাইন মার্কেটপ্লেসে বিক্রেতার দেওয়া পণ্য সম্পর্কিত তথ্যাদি ও কাস্টমার রিভিউ দেখে পণ্যের গুণাগুণ ও মূল্য নিয়ে সহজেই ধারণা পাওয়া যায়। মোবাইল ব্যাংকিং, ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড বা ক্যাশ অন ডেলিভারির মাধ্যমে পণ্যের দাম পরিশোধ করা যায়; মার্কেটপ্লেসগুলোতে থাকে বিভিন্ন ধরনের অফার বা ডিসকাউন্ট। কোনো দোকান বা শোরুমের প্রয়োজন না থাকায় দেশের যেকোনো প্রান্ত থেকে পণ্য ক্রয় বা বিক্রয় করা যায়। পরিসংখ্যান অনুসারে, দেশে ই-ক্যাব নিবন্ধনকৃত ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান রয়েছে প্রায় ২ হাজার; ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যক্তিগত উদ্যোগে পরিচালিত ৫০ হাজারের অধিক পেজ বা প্রতিষ্ঠান রয়েছে।

কেনাকাটায় মানুষ কীভাবে প্রতারিত হচ্ছে?

দেশে অনলাইন কেনাকাটার বিস্তৃতির সঙ্গে সঙ্গে প্রতারণার পরিমাণও বৃদ্ধি পাচ্ছে। অনেক সময় দেখা যায়, বিভিন্ন অনলাইন মার্কেটপ্লেস বা শপে পোশাক, ইলেকট্রনিকস পণ্য, খাদ্যদ্রব্যসহ বিভিন্ন ভালোমানের পণ্যের ছবি ও বর্ণনা দিয়ে ছেঁড়া, নষ্ট, পচা বা নিম্নমানের পণ্য সরবরাহের কারণে ক্রেতারা প্রতারিত হচ্ছে। ভুয়া কাস্টমার রিভিউর কারণে গ্রাহকদের সহজেই প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। অনেক সময় কাক্সিক্ষত সময়ের চেয়ে গ্রাহকের কাছে বিলম্বে পণ্য সরবরাহ করা হয়। মাঝে মাঝে পেমেন্টের পর কা কাক্সিক্ষত পণ্য ডেলিভারি না দিয়ে গ্রাহকের নম্বর বা আইডি ব্লক করে দিয়ে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগও পাওয়া যায়। অনেক প্রতিষ্ঠানের নিজস্ব কার্যালয়, শোরুম বা কাস্টমার সার্ভিস না থাকায় ক্রেতারা কেনাকাটার পরবর্তী সময় বিক্রয়োত্তর সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। কিছু প্রতিষ্ঠানকে বিশাল ছাড়, ক্যাশব্যাক ও বিভিন্ন ধরনের অফার দিয়ে গ্রাহকদের প্রলুব্ধ করে প্রতারণা করতে দেখা যায়। অনেক ক্ষেত্রে কিছু প্রতিষ্ঠান প্রাথমিকভাবে নির্দিষ্ট সংখ্যক ক্রেতার কাছে পণ্য সরবরাহ করে বিশ^াসযোগ্যতা অর্জনের পর বিপুল সংখ্যক ক্রেতার অর্থ হাতিয়ে প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়ার নজিরও রয়েছে। এমন অভিযোগের ভিত্তিতে ই-অরেঞ্জ, ধামাকা ও ইভ্যালিসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানকে ইতোমধ্যেই আইনের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন অপ্রতিষ্ঠিত সাইট বা শপ কর্র্তৃক গ্রাহকের ব্যাংকিং তথ্যসহ ব্যক্তিগত তথ্য চুরি বা বিভিন্ন ফিশিং লিঙ্কের মাধ্যমে তাদের আইডি ও প্রয়োজনীয় তথ্যাদিও হ্যাক করা হচ্ছে।

প্রতারিত হলে প্রতিকার লাভের উপায়

অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারিত হওয়ার পর আইনগত প্রতিকার প্রাপ্তি সম্পর্কিত অজ্ঞতা বা বাড়তি সময় ব্যয় এড়াতে অনেকেই কোনো অভিযোগ দায়ের করেন না। অভিযোগ না করার ফলে প্রতারকরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে বারবার প্রতারণা করে যাচ্ছে। কেনাকাটার সময় বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা, মোবাইল নম্বর, ওয়েবসাইট বা পেজের টজখ সংরক্ষণ করতে হবে; শপ বা পেজের স্ক্রিনশট, অর্থ পরিশোধ ও অর্ডার কনফার্মসংক্রান্ত স্ক্রিনশট, চ্যাটিংয়ের স্ক্রিনশট সংরক্ষণ করতে হবে। প্রতারণা বুঝতে পারার সঙ্গে সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রমাণাদিসহ দ্রুত নিকটস্থ থানায় জিডি বা অভিযোগ করতে হবে। পাশাপাশি, জিডি বা অভিযোগের কপি নিয়ে ভুক্তভোগী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলোর সাইবার সেলেরও সহায়তা নিতে পারেন। অপরাধীকে শনাক্ত করা গেলে পরবর্তী সময় ভুক্তভোগীরা প্রতারকদের বিরুদ্ধে মামলা করার মাধ্যমে তাদের শাস্তি নিশ্চিত করতে পারবেন। এ ছাড়াও ভুক্তভোগী ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ বা আদালতে প্রতারণার মামলা দায়ের করতে পারেন।

প্রচলিত আইনে শাস্তি

ডিজিটাল কমার্স পরিচালনা নির্দেশিকা-২০২১-এ অনলাইন কেনাকাটায় কোনটি ভোক্তার অধিকার আর কোনটি প্রতারণা সে বিষয়ে বিস্তারিত রয়েছে। এ ছাড়াও গ্রাহককে পণ্য ডেলিভারি দেওয়ার সময়সীমা, অগ্রিম মূল্য পরিশোধ, মার্কেটপ্লেসে পণ্য বা সেবা উপস্থাপন সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া আছে। অভিযোগ প্রমাণিত হলে ওই আইনে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও অর্থদন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। প্রতারিত ব্যক্তি ‘দ্য সেলস অব গুডস অ্যাক্ট-১৯৩০’ অনুযায়ী নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট বরাবর অভিযোগ দায়ের করতে পারেন। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন-২০০৯ অনুযায়ী, ভোক্তাকে প্রতিশ্রুত পণ্য সরবরাহ না করলে বা প্রতারণার আশ্রয় নিলে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদন্ড ও অর্থদন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে।

যেসব সতর্কতা অবলম্বন প্রয়োজন

অনলাইনে যেকোনো ধরনের কেনাকাটার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করে পণ্য ক্রয় না করে যাচাই-বাছাই করে পণ্য ক্রয় করতে হবে। এক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত বা জনপ্রিয় মার্কেটপ্লেস বা পেজ থেকে পণ্য কেনার চেষ্টা করতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির স্থায়ী অফিস আছে কিনা, বিক্রেতার আইডি সঠিক কিনা, ওয়েবসাইটের অথেনটিসিটি নিশ্চিতকরণে এসএসএল (Secure Sockets Layer) সার্টিফাইড কিনা তা যাচাই করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের মালিকানা, পরিচিতি, যোগাযোগের নম্বর সংরক্ষণ এবং গ্রাহকদের রিভিউ দেখতে হবে; রিভিউগুলো ভুয়া কিনা তাও যাচাই করতে হবে। অল্প দাম, বিশাল ছাড়, ক্যাশব্যাক বা অন্য কোনো চটকদার বিজ্ঞাপন দেখে প্রলুব্ধ হওয়া যাবে না। পণ্যের বর্ণনা, ছবি, ভিডিও দেখার পাশাপাশি অন্যান্য মার্কেটপ্লেসে পণ্যটির দাম ও গুণাগুণ যাচাই করুন। ডেলিভারি টাইম, ত্রুটিপূর্ণ পণ্য ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়া, রিফান্ড পলিসি ও বিক্রয়োত্তর সেবা সম্পর্কিত তথ্যাদি জানতে হবে। প্রতিষ্ঠানটির চ্যাটবক্সে গিয়ে চ্যাটিং করে পণ্য সম্পর্কিত বিস্তারিত তথ্যাদি নিশ্চিত করতে হবে। ব্যক্তিগত বা সংবেদনশীল কোনো তথ্য শেয়ার না করে ক্যাশ-অন ডেলিভারিতে পণ্য ক্রয় করলে অনলাইন কেনাকাটায় প্রতারিত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। প্রতারিত হলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে দ্রুত অভিযোগ দায়ের করতে হবে। লোভনীয় অফার সম্পর্কিত পপ-আপ বা ই-মেইলে প্রাপ্ত ফিশিং লিঙ্কে ক্লিক করা কিংবা পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে অনলাইনে কেনাকাটা না করাই উত্তম। অনলাইনে কেনাকাটার আগে আপনি যত সতর্ক ও সচেতন থাকবেন এবং যত বেশি যাচাই-বাছাই করবেন, ততই কমবে প্রতারিত হওয়ার সম্ভাবনা। সবার সতর্কতা ও সচেতনতার মাধ্যমেই অনলাইন কেনাকাটায় গ্রাহকদের প্রাপ্য সেবা নিশ্চিত ও প্রতারণা নিয়ন্ত্রণ করে নিরাপদ এবং সমৃদ্ধ অনলাইন মার্কেটপ্লেস প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।

লেখক : পরিচালক (লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইং) র‌্যাব ফোর্সেস সদর দপ্তর

dirmrab@gmail.com

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2009-2022 chapaikhobor24.com # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com