শুক্রবার, ১৮ এপ্রিল ২০২৫, ১১:০৫ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের জীবনাবসান মাগুরায় শিশু আছিয়াকে ধর্ষণে অভিযুক্তের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার আগুন চোখের জলে চিরনিদ্রায় শায়িত মাগুরার সেই শিশুটি সরকার প্রধানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয় ড. ইউনূ‌সের চীন সফর নি‌য়ে রাষ্ট্রদূত Your First Online Casino: A Beginners Guide to PLUS777 Top-Rated Online Casino Platform Official Website পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি’র মৃত্যু আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রাজধানীতে নারী সংহতির মতবিনিময় সভা বিজ্ঞানে নারীর অবদান যাদের আবিষ্কারের কৃতিত্বটুকুও কেড়ে নিয়েছে পুরুষ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নীলফামারীতে বালিকাদের বাইসাইকেল র‌্যালি নাচোলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন

পার্বত্য চট্টগ্রামের উপাখ্যানঃ পেশাভিত্তিক চাঁদাবাজি যেন বৈধ উৎসব

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭
  • ৮৭৯ বার
ফাইল ছবি

মাথার মধ্যে একটা প্রশ্ন ঘুরঘুর করছে। সেটা নিয়েই আমার আজকের লেখা। পার্বত্য চট্টগ্রামের উপজাতি সংগঠণগুলোর কাড়ি কাড়ি টাকার উৎস কি? নানান সময়ে এরা পার্বত্য চট্টগ্রামসহ ঢাকা, চট্টগ্রাম এমনকি দেশের বাইরেও বিভিন্ন স্থানে সভা, সমাবেশ, মিছিল, মিটিং, সেমিনার করে। এই সমস্ত অনুষ্ঠান করতে বহুত টাকা খরচ হয়। এই টাকাগুলো আসে কোত্থেকে?

এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার জন্য গত বেশ কিছুদিন পার্বত্য চট্টগ্রামের বিভিন্ন জায়গায় সরেজমিনে ঘুরে বেড়িয়েছি। কথা বলেছি সাধারণ উপজাতি-বাংগালী সবার সাথে। বিশেষ করে রাঙামাটি জেলায় একটু বেশী ঘুরেছি। পরিচিত, স্বল্প পরিচিত সবার সাথে কথা বলে যা জেনেছি- তা সত্যিই ভয়ংকর।

বৌদ্ধ হওয়ার কারণে আমার বিশেষ কিছু সুবিধা আছে। কিন্তু বাঙালী হবার কারণে সেই সাথে কিছু অসুবিধাও রয়েছে। পার্বত্য চট্টগ্রামের নিরীহ মানুষের কাছ থেকে ব্যাপক চাঁদাবাজি আর বিভিন্ন এনজিও’র কাড়ি কাড়ি টাকার বিনিয়োগই হলো এই অবৈধ টাকার উৎস।

বিভিন্ন সূত্র থেকে জেনেছি যে, তিন পার্বত্য জেলায় দৈনিক গড়ে দেড় কোটি টাকা চাঁদা তুলছে উপজাতি সশস্ত্র গ্রুপগুলো। চাঁদা আদায়ে নিয়োজিত রয়েছে জেএসএস ও ইউপিডিএফের পাঁচ হাজার সশস্ত্র প্রশিক্ষিত কর্মী। আদায় করা চাঁদার টাকা দিয়েই দলের নেতা-কর্মীদের বেতন-ভাতা, রেশন, অবসরকালীন ভাতা, ক্ষতিপূরণ ইত্যাদি দেয়া হয়। এছাড়া পাহাড়ের আঞ্চলিক সংগঠনগুলো চাঁদার এ অর্থ দিয়ে দেশ-বিদেশে সরকার, সেনাবাহিনী এবং বাঙালি বিদ্বেষী প্রচারণা ও তাদের অস্ত্র ভান্ডার সমৃদ্ধ করার কাজ করে।

 

ইউপিডিএফ, জেএসএস(সন্তু লারমা), জেএসএস(সংস্কার)সহ নামি বেনামী আরও বহু উপজাতি গ্রুপ সক্রিয় এই চাঁদাবাজিতে। অনেকে হয়তো বলবেন যে, চাঁদাবাজি তো দেশের আরও অনেক জায়গায় হচ্ছে, এখানে বিশেষত্ব কী? কথা সত্য, কিন্তু পাহাড়ে চাঁদাবাজিতে চরম শঙ্কার কারণ এই জন্য যে, এই সমস্ত কোটি কোটি টাকা যাচ্ছে দুর্ভেদ্য পাহাড়ের বিচ্ছিন্নতাবাদী ও সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর কাছে যারা পার্বত্য জেলাগুলোকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে বিচ্ছিন্ন করে স্বাধীন ‘জুম্মল্যান্ড’ গঠনের স্বপ্নে বিভোর।

বর্তমান চাকমা সার্কেল চীফ ব্যারিস্টার দেবাশীষ রায়ের পিতা ত্রিদিব রায় ছিলো একজন কুখ্যাত রাজাকার। তার অনুসারীরা এখনো সেই আদর্শ নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। আর সুযোগ সন্ধানী সন্তু লারমার সাহস কোন স্তরে থাকলে ভাবুন তো, আজো সে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব গ্রহণ করেনি!!!

নিজস্ব পতাকা, মানচিত্র, মুদ্রা, আইডি কার্ড থেকে শুরু করে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র গড়ার জন্য যত কিছু প্রয়োজন সব কিছুর প্রাথমিক যোগান তারা করে রেখেছে। এই দেশে বহু লোক নিজেকে বিরাট বড় দেশপ্রেমিক হিসেবে পরিচয় দেয় কিন্তু আজো কোন দেশপ্রেমিক দেশকে ভালোবেসে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহিতার মামলা করেছে বলে শুনিনি।

 

নামপ্রকাশে অনিচ্ছুক খাগড়াছড়ির এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘আঞ্চলিক দলগুলোর চাঁদাবাজি অহরহ ঘটছে। কোনো পরিবহন মাল নিয়ে খাগড়াছড়ি ঢোকার সময় অথবা বের হওয়ার সময় চাঁদা দিতে হয়। একেক সময় তারা একেক স্থান থেকে চাঁদা তোলে। চাঁদা না দিলে গাড়ি থামিয়ে স্টাফদের মারধর করা হয়, অনেক ক্ষেত্রে গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়। চাঁদা না দেয়ায় চলতি বছর বিআরটিসি ও প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের গাড়ি পুড়িয়ে দেয় ইউপিডিএফ নামক সশস্ত্র সংঠণের কর্মীরা’।

উপজাতি সংগঠণগুলো তাদের বিরুদ্ধে আনীত চাঁদাবাজির অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে থাকে। তারা বলে যে, তারা চাঁদাবাজি করে না। পাহাড়িদের কল্যাণে তারা কাজ করে, মানুষের সহযোগিতায় তাদের দল পরিচালিত হয়। কিন্তু বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা।

চলতি বছরের ফেব্রুয়ারী মাসে পার্বত্য চট্টগ্রামের আঞ্চলিক রাজনৈতিক সংগঠন ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট ( ইউপিডিএফ)’র সামরিক শাখার প্রধান প্রদীপন খীসা’র বাড়ি থেকে প্রায় ৮০ লাখ টাকার (৭৮ লাখ ৯৫ হাজার ৯৬৬ টাকা) পাশাপাশি বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করে নিরাপত্তা বাহিনী। এই সমস্ত নথিপত্রের মধ্যে ইউপিডিএফের মাসিক আয় ব্যয়ের বিবরণী রয়েছে।

মাসিক প্রতিবেদন নামে জব্ধ হওয়া দুটি নথিতে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিভিন্ন খাতে ৫ লাখ ৮০ হাজার ১৫৮ লাখ টাকা ও গত বছরের মার্চ মাসে ৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬২৬ টাকাসহ ১২ লাখ ৭৬ হাজার ৭৮৪ টাকা খরচের হিসাব পাওয়া গেছে। খরচের খাতগুলো হচ্ছে, খানাপিনা খাতে ৪৬ হাজার ৪৩৫ টাকা, সাংগঠনিক ৬৮ হাজার ১৪১ টাকা, যাতায়াত ও যোগাযোগ ৪০ হাজার ৫৪৫ টাকা, চিকিৎসা ৩৩ হাজার ৫২ টাকা, পরিবার ভাতা ২৭ হাজার ২৮০ টাকা, কর্মী ভাতা ১০ হাজার ৫০০ টাকা, পাহাড়ি ছাত্র পরিষদের জন্য খরচ ১৯ হাজার ৫০ টাকা, যুব ফোরামের খরচ ১৭ হাজার ৩০০ টাকা,  মোবাইল রিচার্জ ১০ হাজার ৫৫৭ টাকা, ছুটি ভাতা ৬ হাজার টাকা, পেপার বিল ২৪০ টাকা, দাপ্তরিক ৫ হাজার ৫০৬ টাকা, পোষাক পরিচ্ছদ খাতে ৮ হাজার ৯০ টাকা, নিরাপত্তা খাতে ২ হাজার ৫৭০ টাকা, হাওলাত প্রদান ১০ হাজার টাকা, হাল নাগাদ পরিশোধ ৬০ হাজার টাকা, এইচ পি বাজেট ১০ হাজার টাকা ও মেসি বাজেট ১ লাখ টাকা ইত্যাদি।

 

এতকিছুর পরও ইউপিডিএফ এই অর্থকে সংগঠনের সেবা খাতে উত্তোলিত গণচাঁদা দাবী করেছে। আমার প্রশ্ন হল এই গণচাঁদা তারা কার কাছ থেকে আদায় করেছে? চাঁদা আদায়ের অনুমতিই বা কে দিয়েছে তাদের?

তিন পার্বত্য জেলায় উপজাতি সশস্ত্র গ্রুপগুলোর চাঁদা আদায়ের পরিমাণ দিনে দিনে বেড়েই যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে পার্বত্য চট্টগ্রামে জীবনযাত্রা অচল হয়ে পড়বে। পার্বত্যাঞ্চল ঘুরে এবং স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাঁদাবাজি এখানে একটি স্বীকৃত বিষয়। সরকারি ভ্যাট-ট্যাক্স না দিলেও বাধ্যতামূলকভাবে সশস্ত্র গ্রুপগুলোর নির্ধারিত চাঁদা পরিশোধ করতে হয়। থানা ও প্রশাসনের কাছে অভিযোগ করলেও কোনো প্রতিকার পান না ভুক্তভোগীরা।

এ প্রসংগে বান্দরবানের লামা উপজেলার এক উপজাতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে হতাশার সুরে বলেন যে, ‘শান্তি চুক্তি আমাদের জন্য হিতে-বিপরীত হয়ে দাঁড়িয়েছে। কারণ, শান্তি চুক্তির আগে শুধু মাত্র শান্তি বাহিনীকে চাঁদা দিতে হত আর এখন তিনটি দলকে (জেএসএস সন্তু, জেএসএস সংস্কার ও ইউপিডিএফ) চাঁদা দিতে হচ্ছে। এভাবে চাঁদা দিতে দিতে আমাদের মত স্বল্প আয়ের মানুষের পক্ষে পেট চালানোয় দায় হয়ে পড়ছে’।

ঐ উপজাতি ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীর কথা যে মিথ্যা নয় তার প্রমাণ পেলাম বান্দরবানের জেলা প্রশাসকের এক বিবৃতিতে। গত বছর বান্দরবান জেলার আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভায় জেলা প্রশাসক দিলীপ কুমার বণিক পার্বত্যাঞ্চলের আঞ্চলিক তিন সংগঠন সন্তু লারমার জনসংহতি সমিতি (জেএসএস), জেএসএস (সংস্কার) ও ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের (ইউপিডিএফ) সন্ত্রাসীদের চাঁদাবাজির চিত্র প্রকাশ্যে তুলে ধরেন।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2009-2022 chapaikhobor24.com # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com