মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের জীবনাবসান মাগুরায় শিশু আছিয়াকে ধর্ষণে অভিযুক্তের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার আগুন চোখের জলে চিরনিদ্রায় শায়িত মাগুরার সেই শিশুটি সরকার প্রধানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয় ড. ইউনূ‌সের চীন সফর নি‌য়ে রাষ্ট্রদূত Your First Online Casino: A Beginners Guide to PLUS777 Top-Rated Online Casino Platform Official Website পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি’র মৃত্যু আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রাজধানীতে নারী সংহতির মতবিনিময় সভা বিজ্ঞানে নারীর অবদান যাদের আবিষ্কারের কৃতিত্বটুকুও কেড়ে নিয়েছে পুরুষ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নীলফামারীতে বালিকাদের বাইসাইকেল র‌্যালি নাচোলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন

বাংলাদেশের আদিবাসী সম্প্রদায়

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : মঙ্গলবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৭
  • ৯৯২ বার
ফাইল ছবি

বাংলাদেশের আদিবাসী জনগোষ্ঠীর পরতে পরতে লুকিয়ে আছে নতুন রঙের ছটা। একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্ত্বার যে সব বৈশিষ্ট্য রয়েছে, আদিবাসী জনগোষ্ঠীর তা রয়েছে। ভিন্ন জীবনধারা, বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতি আর অনন্য শিল্পশৈলীর অফুরান মিশ্রণে ঘেরা আদিবাসী সম্প্রদায়। প্রাচীন ঐতিহ্য, সংস্কৃতি ও ভাষারীতি কালের স্রোতে বাহিত হয়ে চলেছে তাদের সমাজে। আসুন আজ জেনে নেই কিছু আদিবাসী সম্প্রদায় সম্পর্কে-

সাঁওতাল

বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে বসবাসকারী অন্যতম প্রাচীন এবং বৃহৎ নৃগোষ্ঠী সাঁওতাল। উত্তরের দিনাজপুর, রংপুর, বগুড়া, নওগাঁ, ঠাকুরগাঁও এবং পঞ্চগড় জেলাসমূহে তাদের বসতি। তেভাগা ও স্বদেশী আন্দোলন এবং বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পাশাপাশি নানা ঐতিহাসিক ঘটনায় সাঁওতালদের সক্রিয় অংশগ্রহণ রয়েছে। তারা তাদের পরিচয় দেয় ‘হড়’—অর্থাৎ মানুষ হিসেবে।

মাটির তৈরি প্রায় জানালাবিহীন নিচু দরজাবিশিষ্ট ছোট ছোট ঘরে এরা বাস করে। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা তাদের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। সাঁওতাল মহিলারা বালা, হাঁসুলি, মল ইত্যাদি পরতে এবং খোঁপায় ফুল গুজতে ভালোবাসে। সাঁওতালদের পোশাক ‘পাঁচি’, ‘পাঁচাতাত’ ও ‘মথা’। তবে পুরুষরা থান কাপড়ের ধুতি, লুঙ্গি, গেঞ্জি, গামছা এবং নারীরা হাতেবোনা শাড়িও পড়ে।

সাঁওতালদের মধ্যে ছয় রকম বিবাহপ্রথা চালু আছে এবং শুধু বহিঃগোত্র বিবাহের চল আছে। অভিভাবকের পছন্দ অনুসারে বিয়েকে সাঁওতালি ভাষায় ‘ডাঙুয়াবাপলা’ বলে। সাঁওতালরা মূলত কৃষিকাজ করে। কৃষিকাজের যন্ত্রপাতি নিজেরাই তৈরি করে। এগুলোতে শ্রদ্ধাবশত সিঁদুরের ফোঁটা দেয়।

তারা নবান্ন, হোলি, সোহরাই, দাসাই, বাহা প্রভৃতি উৎসব পালন করে। তাদের রয়েছে নিজস্ব গান, সংস্কৃতি এবং নৃত্যভঙ্গিমা। মাদল, দমা ও বাঁশি এদের প্রধান বাদ্যযন্ত্র। এদের প্রধান খাদ্য ভাত। এর পাশাপাশি মাছ, মুরগি, ইঁদুর, বেজি, খরগোশ, গুঁইসাপ, সবজি, শুকর, কাঁকরা প্রভৃতি খায়। সাঁওতালি ভাষায় দেবতাকে বলে ‘বোংগা’। এদের প্রধান দেবতা সূর্য। পাহাড়ের দেবতা হলো ‘মারাংমুরো’ এবং গৃহদেবতার নাম ‘বোঞ্চার’। শবদাহ করার নিয়ম থাকলেও বর্তমানে অর্থাভাবে এরা মৃতদেহ কবর দেয়।

মারমা

মারমা বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম নৃগোষ্ঠী। এরা জাতিগতভাবে বর্মী বা বার্মিজদের উত্তরসূরি। মারমা নামটির উৎপত্তি ‘ম্রাইমা’ থেকে। যা কি না মায়ানমারের জাতীয়তাবাদ থেকে আগত। মারমাদের ভাষা বার্মিজ থেকে আগত একটি উপভাষা। তাদের বর্ণমালাকে ‘মারমাজা’ বা ‘মারিমাচা’ বলে। মারমা পুরুষরা কোমর থেকে হাঁটু অবধি লম্বা ‘দেয়াহ’ পড়ে। কেউ কেউ ‘খিয়ক’ নামক কোমর থেকে গোড়ালি অবধি লম্বা কাপড় পরে। উপরিভাগে ‘বারিস্তা’ নামক পোশাক এবং মাথায় ‘খবং’ নামক পাগড়ি পরিধান করে। মহিলারা উপরিভাগে ‘বেদাই উঙ্গি’ এবং নিম্নভাগে ‘থবিং’ কিংবা ‘থামি’ পরে। এছাড়াও পুরুষ এবং মহিলা উভয়েরই লুঙ্গি পরার চল আছে।

এদের সমাজব্যবস্থা পিতৃতান্ত্রিক এবং পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারে ছেলে ও মেয়ের অংশীদারিত্ব সমান। মারমারা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এবং এদের ধর্মগ্রন্থ হলো ‘খাদুত্তিয়াং’। এদের ধর্মীয় ও সামাজিক উৎসবের মধ্যে অন্যতম হচ্ছে- সাংগ্রিয়া, বৌদ্ধ পূর্ণিমা, কঠিন চীবর দান, ওয়াহগ্যই, ওয়াছো পোয়ে, পইংজ্রা পোয়ে ইত্যাদি। মারমারা ভাত, সবজি, মাছ-মাংস, ফল-মূল, কন্দ খেয়ে থাকে। তোহজা, নাপি বা আওয়াংপি ইত্যাদি বিশেষ খাবার। তারা জুম চাষ, দিনমজুরি, ঝুড়ি বানানো, হাতে কাপড় বোনার কাজ করে। মারমারাও ধীরে ধীরে আধুনিক শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে উঠছে।

গারো

গারোরা ‘মান্দি’ যার অর্থ মানুষ বলে নিজেদের পরিচয় দেয়। ময়মনসিংহ ও সিলেটের আদিবাসী সম্প্রদায় তারা। এরা শক্তশালী মাঝারি দেহাবয়ব, চ্যাপ্টা নাক ও ছোট চোখ বিশিষ্ট হয়। তাদের আদি ধর্মের নাম সাংসারেক। গারোদের প্রধান দেবতার নাম তাতারা রাবুগা। গারোদের ভাষা হলো মান্দি ভাষা।

গারোরা মুরগি, হাঁস, গরু, ছাগল, শুকর প্রভৃতি খায়। এরা গরুর দুধ খায় না। বিড়াল গারোদের টোটেম হওয়ায় বিড়ালও খায় না। পুঁটি মাছের শুঁটকি দিয়ে তৈরি ‘নাখাম কারি’ এদের খুব প্রিয় খাবার। মদ তাদের অন্যতম প্রিয় পানীয়। গারোদের মধ্যে গোত্রবিবাহ নিষিদ্ধ। গারোরা মাতৃতান্ত্রিক সমাজব্যবস্থায় বিশ্বাসী। সমাজে ছেলেরা অবহেলিত এবং মায়ের মৃত্যুর পর বাবার প্রতি মেয়ের কোন দায়িত্ব থাকে না। এদের আদি পেশা জুমচাষ হলেও বর্তমানে এরা আধুনিক কৃষিকাজের পাশাপাশি নানান পেশায় জড়িত।

জৈন্তিয়া

সিনতেং (Synteng) গোত্রের অন্তর্ভুক্ত এ গোষ্ঠীর দৈহিক গড়ন মঙ্গোলয়েড। তাদের কিছু অংশ সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলায় বসবাস করে। এদের নিজস্ব ভাষা থাকলেও বর্ণমালা নেই। জৈন্তিয়াদের স্বাক্ষরতার হার শতকরা প্রায় ৮০ ভাগ যা বৃহত্তর সিলেটের সব উপজাতির মধ্যে সর্বোচ্চ। জৈন্তিয়া নারীরা তাদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরে এবং মাথায় খাসিয়াদের অনুরূপ কাপড় বাঁধে।

এরা মূলত কৃষিকাজ করে, পান, সুপারি প্রভৃতি উৎপাদন করে। শুকরের মাংস এদের অন্যতম প্রিয় খাবার। এছাড়াও ভাত, সবজি, মাছ, খাসির মাংস, মুরগি, দুধ ও দুগ্ধজাত পণ্য, চা প্রভৃতি খেতে পছন্দ করে। ‘হকতই’ এদের অন্যতম উৎসব যা দুই দিনব্যাপী পালিত হয়। ‘যত নৃত্য, তত ফলন’– এ প্রবাদে বিশ্বাসী হয়ে বিভিন্ন উৎসবে নিজস্ব ভঙ্গিমায় নৃত্য পরিবেশন করে।

ত্রিপুরা

ত্রিপুরারা চট্টগ্রাম অঞ্চলে বাস করে। তারা ককবরক বা হিলাম ভাষায় কথা বলে। এদের কোন নিজস্ব বর্ণমালা নেই। পুরুষেরা খবং, ধুতি এবং মেয়েরা থামি, রিং-নাই, খাদি পড়ে। পুরুষ এবং নারীদের জাতীয় পোশাক যথাক্রমে রিমতাই, কুবাই এবং রিনাই, রিসা। নারীরা ভিন্নধর্মী গহনাও পরে। এদের নিজস্ব দেবতার পাশাপাশি অনেকে হিন্দু ধর্মের কিছু দেবতারও আরাধনা করে। এরা চাষের পাশাপাশি অন্য পেশায়ও নিয়োজিত।

মণিপুরী

বাংলাদেশের সিলেট ও ভারতের মণিপুরের অধিবাসী এরা। এদের ভাষা মেইতেই লন। এরা বিষ্ণুপ্রিয়া, মৈতৈ ও পাঙন নামক শ্রেণিতে বিভক্ত। এদের সংস্কৃতি অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী যার মধ্যে প্রধান হচ্ছে এদের গীত ও অপূর্ব নৃত্য। অপোকপা এবং চৈতন্য ধারার সনাতনী ধর্মমতে বিশ্বাস করে। দোল পূর্ণিমায় মুক্তমাঠে নৃত্য করে। এদের অন্যতম উৎসব রাসপূর্ণিমা। হাতেবোনা কাপড় ও হস্তশিল্পে মণিপুরীরা অত্যন্ত দক্ষ।

ম্রো বা মুরং

মুরং শব্দটির একবচন ‘ম্রো’ যার অর্থ মানুষ। ম্রো ভাষায় এরা নিজেদের মারুচা বলে থাকে। মেয়েরা ‘ওয়াংকাই’ এবং পুরুষরা ‘ডং’ পরে। ছেলেরা মাথায় চিরুনি এবং মেয়েরা ফুল গুজে রাখে। একই গোত্রে বিবাহ নিষিদ্ধ। শরীরে রঙের প্রলেপ ব্যবহার করে। প্রকৃতি পূজারী এবং শুধু ইহকালে বিশ্বাসী। এদের নিজস্ব নাচ এবং ক্লং নামক বাঁশির ব্যবহার রয়েছে।

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2009-2022 chapaikhobor24.com # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com