মঙ্গলবার, ১৫ এপ্রিল ২০২৫, ০৬:২৩ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিকের জীবনাবসান মাগুরায় শিশু আছিয়াকে ধর্ষণে অভিযুক্তের বাড়িতে বিক্ষুব্ধ জনতার আগুন চোখের জলে চিরনিদ্রায় শায়িত মাগুরার সেই শিশুটি সরকার প্রধানকে চীন সফরের আমন্ত্রণ জানানো হয় ড. ইউনূ‌সের চীন সফর নি‌য়ে রাষ্ট্রদূত Your First Online Casino: A Beginners Guide to PLUS777 Top-Rated Online Casino Platform Official Website পঞ্চগড় সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে বাংলাদেশি’র মৃত্যু আন্তর্জাতিক নারী দিবসে রাজধানীতে নারী সংহতির মতবিনিময় সভা বিজ্ঞানে নারীর অবদান যাদের আবিষ্কারের কৃতিত্বটুকুও কেড়ে নিয়েছে পুরুষ আন্তর্জাতিক নারী দিবসে নীলফামারীতে বালিকাদের বাইসাইকেল র‌্যালি নাচোলে আন্তর্জাতিক নারী দিবস উদযাপন

বিজ্ঞানে নারীর অবদান যাদের আবিষ্কারের কৃতিত্বটুকুও কেড়ে নিয়েছে পুরুষ

রিপোর্টারের নাম
  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৯ মার্চ, ২০২৫
  • ১৩ বার

‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর/অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর’— কাজী নজরুল ইসলামের কবিতার এ পঙক্তি যতটা সাম্যের কথা বলে, বাস্তবতা ততটাই আলাদা। পৃথিবীজুড়ে ইতিহাস আর বিজ্ঞানের বইয়ে লেখা দিগ্বিজয়ী আবিষ্কার আর উদ্ভাবনের অধিকাংশের কৃতিত্বই জুটেছে ‘মহৎ’ কোনো পুরুষের ভাগ্যে। ইতিহাসের পাতায় তাদের নাম লেখা রয়েছে স্বর্ণাক্ষরে। আবার যুগান্তকারী কোনো আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে ইতিহাস গড়েছেন এমন অনেক অবিশ্বাস্য নারীর কথা লেখা হয়েছে চরম অযত্নে, অতি সাধারণভাবে। অনেকে আবার তার আবিষ্কারের কৃতিত্বটুকুও পাননি। এমনকি সে কৃতিত্বের মাধ্যমে ‘মহৎ’-এর খাতায় নাম লিখিয়ে অনেক পুরুষ বিজ্ঞানী জিতেছেন পুরস্কার, কামিয়েছেন টাকা।

ইতিহাসের ভাঁজে এমন অনেক ঘটনা রয়েছে, যা সময়ের গহ্বরে একেবারে হারিয়ে যায়নি। এসব ঘটনা আমাদের জানায়, যুগান্তকারী সব আবিষ্কার আর উদ্ভাবনের মাধ্যমে বিজ্ঞান ও মানবজীবনে কতটা অবদান রেখেছেন নারী বিজ্ঞানীরা। এটি আরো তাৎপর্যপূর্ণ কারণ আমরা সে সময়কালের কথা বলছি, যেখানে নারীর সমান শিক্ষা, সমান সুযোগের কথা ছিল স্বপ্নের মতো।

নারীর এ দিনে চলুন পরিচিত হয়ে নেয়া যাক এমন কয়েকজন বিজ্ঞানীর সঙ্গে, যারা নিজেদের সময় আর সীমাবদ্ধতার বাইরে হেঁটেছেন। লক্ষ্যকে জয় করেছেন, বিলিয়ে গেছেন মানুষের স্বার্থে।

১. রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিন: দ্য ডাবল হেলিক্স

মানবদেহের ক্ষুদ্র একক ডিএনএ’র ডাবল হেলিক্স স্ট্র্যান্ড কাঠামো আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়া হয় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানী জেমস ডি ওয়াটসন এবং ফ্রান্সিস এইচসি ক্রিককে। তবে ১৯৫১ সালে লন্ডনের কিংস কলেজে এ সংক্রান্ত গবেষণার সময় ব্রিটিশ রসায়নবিদ এবং এক্স-রে স্ফটিকবিদ রোজালিন্ড ফ্র্যাঙ্কলিনই ডাবল হেলিক্স স্ট্র্যান্ড কাঠামোর যুগান্তকারী ছবি ‘ফটো ৫১’ তুলেছিলেন। তিনিই প্রথম প্রতিষ্ঠা করেন ডিএনএ অণুর আকৃতি কুণ্ডলাকার।

এদিকে রোজালিন্ডের এক সহকর্মী তাকে না জানিয়েই ছবিটি ওয়াটসন ও ক্রিককে দেখান। এর দুই বছর পর ১৯৫৩ সালে তারা একটি জার্নাল প্রকাশ করেন। এতে জানান, রোজালিন্ডের কাজ তাদের আবিষ্কারকে সমর্থন করে। চার বছর পর এ আবিষ্কারের জন্য নোবেল জেতেন সে দুই বিজ্ঞানী।

২. ইউনিস ফুট: গ্রিনহাউজ ইফেক্ট

গ্রিনহাউজ ইফেক্ট (প্রভাব) আবিষ্কারের কৃতিত্ব দেয়া হয় ব্রিটিশ বিজ্ঞানী জন টিন্ডলকে। তবে তিনি নন, বরং আমেরিকান বিজ্ঞানী ও নারী অধিকার কর্মী ইউনিস ফুট গ্রিনহাউজ প্রভাবের তত্ত্ব উপস্থাপন এবং প্রদর্শন করেছিলেন।

১৯৫০-এর দশকে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তিনি ১৯৫৭ সালে আমেরিকান জার্নাল অব সায়েন্সে তার গবেষণাপত্র প্রকাশ করেন। কিন্তু তাকে তখন বৈজ্ঞানিক সম্মেলনে গবেষণা উপস্থাপনের অনুমতি দেয়া হয়নি। অগত্যা একজন পুরুষ সহকর্মীকে এটি করতে বলেছিলেন ইউনিস। তার আবিষ্কার টিন্ডলের তিন বছর আগে প্রকাশ হলেও মানুষ গ্রিনহাউস প্রভাব আবিষ্কারের জন্য তাকে মনে রাখেনি।

৩. লিস মেইটনার: নিউক্লিয়ার ফিশন

নিউক্লিয়ার ফিশন বা পরমাণু বিভাজনের ক্ষমতা– এ যুগান্তকারী উদ্ভাবনের জন্য ১৯৪৫ সালে নোবেল জেতেন অটো হ্যান। তবে এই ধারণার প্রবর্তন করেছিলেন কিংবদন্তী পদার্থবিদ ম্যাক্স প্ল্যাঙ্কের ছাত্র, অস্ট্রিয়ান ও সুইডিশ পদার্থবিদ লিস মেইটনার। ইউরেনিয়াম ক্ষয় সম্পর্কে আরো জানতে সহকর্মী অটো হ্যান এবং ফ্রিটজ স্ট্র্যাসম্যানকে নিউট্রন দিয়ে ইউরেনিয়াম পরমাণুতে বিস্ফোরণের ধারণার প্রস্তাব করেছিলেন তিনি।

ইহুদি হওয়ায় নাৎসিদের হাত থেকে বাঁচতে মেইটনারকে গবেষণা ফেলে স্টকহোমে পালিয়ে যেতে হয়েছিল। কিন্তু তার সহকর্মীরা গবেষণা চালিয়ে যান ও অপ্রত্যাশিত ফলাফল পান।

এরপর লিস মেইটনার অস্ট্রিয়ান ব্রিটিশ পদার্থবিদ অটো ফ্রিশের সঙ্গে গবেষণা শুরু করেন। তারা হ্যান এবং স্ট্র্যাসম্যানের আবিষ্কারের নাম দেন ‘ফিশন’। ১৯৪৫ সালে হ্যান এ আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরষ্কার পান। তবে তিনি মেইটনারের কথা কখনোই উল্লেখ করেননি।

৪. হেডি ল্যামার: ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন

অস্ট্রিয়ান বংশোদ্ভূত হলিউড অভিনেতা হেডি ল্যামার ছিলেন তারবিহীন যোগাযোগের (ওয়্যারলেস কমিউনিকেশন) প্রবর্তক। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এ তারকা জর্জ অ্যান্থেইলের সঙ্গে কাজ করে ‘ফ্রিকোয়েন্সি হপিং’ আবিষ্কার করেছিলেন, যাতে তারা সামরিক রেডিওর ত্রুটি রোধ করতে পারেন। তারা মিত্রদের টর্পেডোর জন্য রেডিও নির্দেশিকা ব্যবস্থাও তৈরি করেছিলেন।

তার কাজই মূলত ওয়াই-ফাই, সিডিএমএ এবং ব্লুটুথ প্রযুক্তির ভিত্তি ছিল। পরবর্তীতে একজন গবেষক তার পেটেন্ট পুনঃআবিষ্কার করেন এবং ল্যামার অবশেষে ইলেকট্রনিক ফ্রন্টিয়ার ফাউন্ডেশন পুরস্কার জেতেন।

৫. লেডি অ্যাডা লাভলেস: কম্পিউটার প্রোগ্রামিং

ব্রিটিশ কবি লর্ড বায়রনের মেয়ে লেডি অ্যাডা লাভলেস ১৮৪৩ সালে বিশ্বের প্রথম কম্পিউটার প্রোগ্রামের নির্দেশনা লিখেছিলেন। সে সময় তিনি গণিতবিদ ও উদ্ভাবক চার্লস ব্যাবেজের সঙ্গে কম্পিউটারের আগের বিশ্লেষণাত্মক ইঞ্জিন তৈরিতে সহযোগিতা করছিলেন।

জটিল গণিত সমস্যা সমাধান বা এমনকি সংগীত রচনার জন্য ব্যাবেজের মেশিনে কীভাবে ডেটা সরবরাহ করা যেতে পারে তা তার বিস্তৃত নোটগুলো নির্ধারণ করেছিল। কিন্তু ব্যাবেজই যেহেতু আসল ইঞ্জিনটি তৈরি করেছিলেন, অ্যাডা লাভলেসের অবদান তাই বিতর্কের আড়ালেই থেকে গেছে।

৬. অ্যালিস বল: কুষ্ঠরোগের চিকিৎসা

হ্যানসেন রোগ বা কুষ্ঠ, এক ধরনের ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণ, যার উল্লেখ খ্রিষ্টপূর্ব ১৫৫০ সালের দিকে মিশরীয় প্যাপিরাসে পাওয়া যায়। এ রোগে আক্রান্ত রোগীদের সাধারণত আলাদা রেখে মৃত্যুর জন্য ছেড়ে দেয়া হতো।

কিন্তু ২৩ বছর বয়সী রসায়নবিদ অ্যালিস বল হাওয়াইয়ের কালিহি হাসপাতালে কাজের সময় এর প্রতিকার খুঁজে বের করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি ভাবছিলেন, কীভাবে সরাসরি রক্তপ্রবাহে চালমুগরা তেল ইনজেক্ট করবেন। কারণ এটি কুষ্ঠ রোগের উপসর্গগুলোর উপশম করছিল।

১৯১৬ সালে তিনি এ তেলকে ফ্যাটি অ্যাসিড এবং ইথাইল এস্টারে পরিণত করে ইনজেকশনযোগ্য করে তোলার উপায় আবিষ্কার করেন। এর কয়েক মাস পর ল্যাব দুর্ঘটনায় মারা যান অ্যালিস। তার বিভাগের প্রধান আর্থার ডিন তার গবেষণার দায়িত্ব নেন এবং ‘ডিন’স মেথড’-এর ওপর একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন।

৭. ক্যান্ডেস পার্ট: স্নায়ুবিজ্ঞান বা নিউরোসায়েন্স অনুসন্ধান

স্নাতকোত্তর পর্যায়ের ছাত্রী থাকাকালে ক্যান্ডেস পার্ট একটি রিসেপ্টর আবিষ্কার করেছিলেন। এটি আফিমকে মানুষের মস্তিষ্কে প্রবেশ করতে সাহায্য করে। নিউরোসায়েন্স বা স্নায়ুবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে এটি ছিল এক যুগান্তকারী আবিষ্কার। তবে এ আবিষ্কারের জন্য তারই অধ্যাপক ড. সলোমন স্নাইডার পুরস্কার লুফে নেন।

এ ঘটনা জানার পর ক্যান্ডেস যখন প্রতিবাদ জানিয়ে তাকে চিঠি লেখেন, তখন উত্তরে সলোমন লেখেন, ‘খেলাটা এভাবেই খেলা হয়’।”

সূত্র: ইন্ডিয়া টুডে

নিউজটি শেয়ার করুন..

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

এ জাতীয় আরো খবর..
© All rights reserved © 2009-2022 chapaikhobor24.com # গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য মন্ত্রনালয়ের বিধি মোতাবেক নিবন্ধনের জন্য আবেদিত # এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি।
Theme Dwonload From ThemesBazar.Com