অনলাইন নিউজ : মোবাইল নেটওয়ার্ক অপারেটর রবি আজিয়াটা লিমিটেডের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ প্রতিষ্ঠানটির কাছে ২২৭ কোটি টাকা চেয়ে মামলা করেছেন। এই টাকা তিনি চেয়েছেন ‘অবসর–সুবিধা ও অন্যায়ভাবে চাকরিচ্যুতি’র ক্ষতিপূরণ বাবদ।
ঢাকা যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ আদালতে সোমবার মাহতাব এই মামলা করেন। এতে রবি আজিয়াটা ছাড়াও প্রতিষ্ঠানটির সাবেক সিইও ইজাদ্দিন ইদ্রিস, বর্তমান বোর্ড চেয়ারম্যান থায়াপরান এস সাঙ্গারা পিল্লাইসহ সংশ্লিষ্টদের বিবাদী করা হয়।২০১০ সালে মাহতাব উদ্দিন প্রধান আর্থিক কর্মকর্তা (সিএফও) পদে রবিতে যোগ দেন। ২০১৬ সালে হন সিইও। পরে ২০২১ সালে তিনি পদত্যাগ করেন।
বিজ্ঞপ্তিতে আরও বলা হয়, হঠাৎ করে রবি মাহতাব উদ্দিনের বিরুদ্ধে ২০১৯ সালের একটি আর্থিক লেনদেনের বিষয়ে ২০২১ সালের ৭ অক্টোবর কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠায়। এই লেনদেন সম্পর্কে আজিয়াটা গ্রুপ ও রবির বোর্ড অবগত ছিল।
মাহতাব উদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে ফেসবুকে এক পোস্টে বলেন, আমি প্রায় তিন বছর চুপ ছিলাম। আজ আর নয়। বন্ধ দরজার আড়ালে যা যা হয়েছে সবকিছুই আমার রবি টিম, পরিবার এবং শুভাকাঙ্ক্ষীরা জানার অধিকার রাখেন। ২০১৯ এর আগস্ট থেকে এ্যাক্সিয়াটা গ্রুপ এবং গ্রুপের জিসিইও (ইজ্জাদিন ইদ্রিস) এর সঙ্গে আমার সম্পর্ক তিক্ত হতে শুরু করে। কারণ, আমার চুক্তি নবায়ন এবং ভাতা বৃদ্ধির বিষয়ে তাদের গুরুতর অবহেলা। আমি যথেষ্ট সম্মানের সঙ্গে জিসিইও-এর চুক্তি ফিরিয়ে দিই। নভেম্বর ২০২০ এর এক আলোচনার পরে কোনো রকমের মনোমালিন্য ছাড়াই আমি সেখান থেকে সরে আসতে চাই, যার প্রত্যুত্তরে আমি সম্ভাব্য ফলাফলের হুমকিসহ ইমেইল পাই। সত্যি বলতে, তাদের দেওয়া মিথ্যা আশ্বাস এবং সংশোধিত বেতন-ভাতা আমার চাকরি, আমার স্বপ্ন, আমার সবকিছুকেই এক অনিশ্চয়তার পথে ঠেলে দিয়েছিলো। এই সবকিছুই আমার কাজের চুক্তি লঙ্ঘন করেছিলো। এতকিছুর পরও আমি কখনোই আমার কঠোর পরিশ্রম এবং রবির প্রতি আমার অঙ্গীকারে ব্যঘাত ঘটতে দিইনি। ১২ বছরেরও বেশি সময় ধরে আমি এই কম্পানির প্রতি দায়িত্ব পালন করে গেছি। যখন আমি রবি ছেড়ে দিই, ২০২১ এর আগস্টে, তখন আমার ব্যক্তিগত ক্যারিয়ার এবং রবির পারফরম্যান্স— দুটোই সফলতার শিখরে ছিল। আমার সময়ে কোম্পানিটা উপরের কিছু মানুষের ক্ষমতার দুর্ব্যবহারে নিমজ্জিত ছিল। আমার পদত্যাগের প্রায় ১০ মাস পরে, ২৫ মে ২০২২-এ, আমাকে জানানো হয় যে, আমি অবসর সুবিধাসমূহ পাব না, কারণ আমাকে ২০২১ সালের ৩১ অক্টোবরেই বহিষ্কার করা হয়েছে। একটি প্রসিদ্ধ কোম্পানি কি কখনও একজনকে বহিষ্কার করতে পারে, যে তার কোম্পানিতে আর কর্মী হিসেবেই নেই? তাও আবার পদত্যাগের ১০ মাস পর? জিসিইও সাহেব কিন্তু আমার পদত্যাগের পরও হয়রানি থামাননি। আমাকে বিভিন্ন ভাবে ফাঁসাতে চেয়েছেন, কিন্তু পারেননি। ২০১৯ এর এক ট্রানজেকশন নিয়েও কথা তুলেছেন; আইটেম এর ক্যাপেক্স/ওপেক্স হওয়া নিয়ে। বিক্রেতা থেকে শুরু করে সংবিধিবদ্ধ নিরীক্ষক এবং স্থানীয় ম্যানেজমেন্ট টিম কেউই কোনো অনৈতিক ঘটনা ঘটার ইঙ্গিত দেননি, যেটা রবির ২০২১-এর ফাইন্যানশিয়াল স্টেটমেন্টেও প্রতিফলিত হয়।
নিতান্তই করপোরেট প্রতিহিংসার কারণে ৩১ বছরের এক্সিকিউটিভ ক্যারিয়ার ধ্বংস হয়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করে দেখুন— চুক্তিবদ্ধ বোনাস, শেয়ার, অবসর সুবিধাসমূহ সবকিছু থেকেই আপনি বঞ্চিত হলেন; মর্যাদাহানি আর গুজবের কারণে করপোরেট জগতে কুখ্যাত হয়ে উঠলেন। একটি হাই প্রোফাইল ক্যারিয়ার এবং কয়েক দশকের অভিজ্ঞতার জায়গায় চলে আসে আর্থিক বঞ্চনা এবং মানসিক যন্ত্রণা। টাকা দিয়ে এই অবিচারের ক্ষতিপূরণ হবে না।
যারাই আমাকে একজন ব্যক্তি হিসেবে চেনেন, তাদের বুঝতে একটু কষ্ট হবে যে কেন আমি আদালত থেকে বিচার পাওয়ার এই কঠোর সিদ্ধান্ত নিয়েছি। একটি বিলিয়ন ডলার কোম্পানির বিরুদ্ধে যুদ্ধ না করার কথা আমাকে আমার শুভাকাঙ্ক্ষী থেকে শুরু করে পরামর্শদাতা সবাই বলেছেন। আমি যেন এগুলো ভুলে গিয়ে জীবনে সামনে এগিয়ে যাওয়ার কথা ভাবি— এই পরামর্শ দিয়েছেন। আমি কীভাবে পারব সেটা? আমার মতো আরও অনেক বাংলাদেশি এরকম করপোরেট পলিটিক্স এবং ফাউল প্লে এর শিকার। এবং বেশিরভাগই ফাইট করার সাহস পাননি, সেই একই ভয়ের কারণে, কিংবা ক্যারিয়ারের ক্ষতি হবার ভয়ে।
আজকে, আমি জানি আমি আমার নৈতিক দায়িত্ব পালন করছি। আমি তাদের বিরুদ্ধে ফাইট করছি যারা এরকমের অনৈতিক কাজ করতে পারে কোনোরকমের পরিণতির ভয় ছাড়াই, কারণ তাদের ক্ষমতা তাদের একজন ‘ইন্ডিভিজুয়াল’ এর চাইতে শক্তিশালী করে রেখেছে। আমার সবার প্রতি একটাই অনুরোধ- রবি এবং আমার প্রতি ন্যায্য অভিমত পোষণ করবেন এবং মাননীয় আদালত-কে একটি প্রমাণ-ভিত্তিক সিদ্ধান্তে আসার সুযোগ দেবেন।
মাহতাব উদ্দিনের মামলার বিষয়ে জানতে চাইলে রবি কর্তৃপক্ষ এক বিবৃতিতে বলেছে, আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের এ বিষয়ে এখনও কিছু জানানো হয়নি। তাই এখনই বিষয়টি নিয়ে তাদের পক্ষে কোনো মন্তব্য করা সম্ভব নয়।রবি আজিয়াটা দেশের দ্বিতীয় শীর্ষ মোবাইল অপারেটর। মালয়েশিয়াভিত্তিক বহুজাতিক প্রতিষ্ঠান আজিয়াটা গ্রুপ এর বেশির ভাগ শেয়ারের মালিক। রবি দেশের পুঁজিবাজারে নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান।